বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত বিএনপির

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ১৬৬ বার পড়া হয়েছে

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠক

কারাবন্দি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৪ টায় শুরু হওয়া বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে যোগ দেওয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কলঙ্কজনক নির্বাচন আখ্যা নির্বাচনের বছর পূর্তি আগামী ৩০ ডিসেম্বর গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসাবে পালন করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই দিবসটিতে কালো পতাকা মিছিল অথবা অনুমতি সাপেক্ষে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, এবার আন্দোলনে ঢাকা মহানগরকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিটি ওয়ার্ডে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মূল দল বিএনপির নেতাদের সুসম্পর্ক তৈরি করা, এক সঙ্গে কর্মসূচি করাসহ ঐক্য গড়তে নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আগামী ৩০ ডিসেম্বর সেই কলঙ্কজনক নির্বাচন যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় একটি কলঙ্ক বলে আমরা মনে করি। সেই দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ দিনটি যথাযোগ্য গুরুত্বের সঙ্গে পালন করার জন্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট ও বিএনপি তাদের কর্মসূচি গ্রহণ করে তা পালন করবেন।

বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর উল্লেখ করে তার মুক্তির দাবিতে ‘কার্যকর আন্দোলন’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালনের সিদ্ধান্ত

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আগামী বছর স্বাধীনতার অর্ধশত বর্ষ। এই অর্ধশত বার্ষিকী বছরব্যাপী বিএনপি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করার জন্যে একটি উপ-কমিটি গঠন করেছে। এই উপ-কমিটি সারা বছর ধরে কর্মসূচি পালন করবার পরিকল্পনা করবেন এবং সেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবার জন্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এই উপকমিটির প্রধান করা হয়েছে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। সদস্যরা হলেন- গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।

বৈঠকে সদ্য প্রয়াত ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যু গভীর শোক প্রকাশ করে তার পরিবার ও ব্র্যাকের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। একই সঙ্গে জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান কবীর মুরাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

রোহিঙ্গায় গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার জন্য গাম্বিয়া, নেদারল্যান্ড কানাডাকে চিঠি দেবে বিএনপি। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আদালতে এই মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। যেহেতু গাম্বিয়া এই মামলাকে আন্তর্জাতিক আদালতে তুলে নিয়ে এসেছে। গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করেছে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস। সেজন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে পত্র দেওয়া হবে। দুঃখজনক হচ্ছে যে, এই মামলায় বাংলাদেশের কোনো ভূমিকাই ছিলো না।’

এনআরসি নিয়ে বিএনপির তার অবস্থান জানিয়ে রবিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করবে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব। মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী ১৯ জানুয়ারি পালনেরও সিদ্ধান্ত হয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।

আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিকে বিএনপির অভিনন্দন

জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা যেহেতু একটি রাজনৈতিক দল, আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে সবসময় সহযোগিতা করি, স্বাগত জানাই এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যেহেতু নতুন নেতৃত্ব গঠন করা হয়েছে। আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা আশা করবো, এই নতুন কার্যকরী পরিষদ গঠিত হয়েছে, এই কার্যকরী পরিষদ তাদের অতীতের অপকর্মগুলোকে ভুলে গিয়ে জনগণের অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে তারা অতিদ্রুত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। যে নির্বাচনটি একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হবে এবং মানুষের ভোটের অধিকারগুলো ফিরিয়ে দেবেন।’

আওয়ামী লীগের অতীত কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন,‘আওয়ামী লীগ একটি পুরনো ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল এবং নিঃসন্দেহে তারা এই জাতির গঠনে, জাতির স্বাধীনতা লাভে এবং গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য অতীতে অনেক গৌরবময় অধ্যায় তাদের রয়েছে, ইতিহাস রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই দলটির হাতেই বার বার গণতন্ত্র নিহত হয়েছে। ১৯৭৫ সালে তারা একবার বাকশাল করেছিলো আবার এই একদশক ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার জন্য সব কাজ সমাপ্ত করেছে।’

মির্জা ফখরুল জানান, ভারতের লোকাসভায় পাস হওয়া এনআরসি ইস্যুতে রবিবার বিকাল তিনটায় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে বিএনপি।

সংবাদটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও সংবাদ