বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫২ অপরাহ্ন

৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটির ভোট

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ১১০ বার পড়া হয়েছে

আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন রেখে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ২ জানুয়ারি হবে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। ৯ জানুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময়।

রোববার নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।

তিনি জানান, দুই সিটিতে ৩০ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভোটই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) গ্রহণ হবে।

অর্থাৎ এবারই প্রথম রাজধানীর অর্ধকোটি ভোটারের সবাই মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দেবেন।

মেয়র পদে প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে ভোট করতে পারবেন; তবে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নির্দলীয় প্রতীকে।

বিভক্তির পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে একসঙ্গে ভোট হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল।

নির্দলীয় ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হক এবং ঢাকা দক্ষিণেও ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হন।

আনিসুল হকের মৃতু্যর পর বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের বর্জনের মধ্যে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন। উপনির্বাচনের আগে আইন সংশোধন হওয়ায় সেই নির্বাচনটি হয় দলীয় প্রতীকে।

মেয়াদ শেষ হওয়ায় আগামী বছরের মে মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে এই দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা ছিল ইসির।

এর মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভোটের তারিখ নির্ধারণে রোববার সভায় বসে নির্বাচন কমিশন।

সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীরকে নিয়ে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিইসি নুরুল হুদা।

তফসিল ঘোষণা করায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে (মঙ্গলবার) আগাম প্রচারণামূলক সব পোস্টার-বিলবোর্ড নিজ দায়িত্বে নামিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ইসি।

এ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইসির দুই যুগ্মসচিবকে। উত্তরে দায়িত্ব পালন করবেন আবুল কাশেম, দক্ষিণের দায়িত্ব পেয়েছেন আব্দুল বাতেন।

ঢাকা উত্তর সিটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় হবে বনানী কমিউনিটি সেন্টার; দক্ষিণ সিটিতে মতিঝিল কমিউনিটি সেন্টার (বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার) রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

পাঁচ বছর আগে ঢাকার দুই সিটির সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও হয়েছিল ২৮ এপ্রিল। এবার চট্টগ্রাম সিটিতে ভোট হবে পরে।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল সেই নির্বাচনের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা হয় ওই বছরের ১৪ মে, দক্ষিণ সিটিতে ১৭ মে ও চট্টগ্রাম সিটিতে প্রথম সভা হয় একই বছরের ৬ আগস্ট।

সে হিসাবে ঢাকা উত্তরে বর্তমানে দায়িত্বশীলদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৩ মে, আর দক্ষিণে একই বছরের ১৬ মে পর্যন্ত। আর চট্টগ্রাম সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুলাইয়ে।

ভোটতথ্য

উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪ ওয়ার্ডের প্রায় ৩০.৫ লাখ ভোটার। দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে ভোটার প্রায় ২৩.৫ লাখ। দুই সিটিতে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র আড়াই হাজারের বেশি; ভোটকক্ষ প্রায় ১৩ হাজার। প্রতি ভোটকেন্দ্রে ১ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি ভোটকক্ষে ১ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ২ জন পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকবেন। উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮। ভোটকেন্দ্র ১২৯৫, ভোটকক্ষ ৬৪৮২। ভোটারদের মধ্যে পুরুষ ১৫৬৩৫৩০ জন, নারী ১৪৭২০৯১ জন। দক্ষিণে সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫। ভোটকেন্দ্র ১১০৮, ভোটকক্ষ ৫৭৯১। ভোটারদের মধ্যে পুরুষ ১২৬৩৫৬৭ জন, নারী ১১০৩৫৩১।

জামানত ও ভোটার তালিকার সিডি

ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী দক্ষিণের প্রত্যেক মেয়র প্রার্থীকে ১ লাখ টাকা জামানত রাখতে হবে। ২০ লাখের বেশি ভোটার হলে ১ লাখ টাকার জামানতের বিধান রয়েছে।

এবার প্রার্থীদের ভোটার তালিকার সিডি কেনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি ওয়ার্ডের সিডির জন্য প্রার্থীদের গুনতে হবে ৫০০ টাকা।

অন্যদিকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলরদের তিনটি ওয়ার্ডের সিডি কিনতে হবে ১৫০০ টাকা দিয়ে।

সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জামানত ভোটার অনুপাতে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে ১০ হাজার টাকার জামানতের বিধান রয়েছে।

স্বপদে থেকে ভোট নয়

দুই সিটির বর্তমান মেয়ররা ভোটে অংশ নিতে চাইলে তাদের পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।

আদালতের রায়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি লাভজনক বিবেচিত হওয়ায় প্রার্থী হতে পদ ছাড়তে হচ্ছে জনপ্রতিনিধিকে।

সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, মেয়র পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে এ ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে হলে তাকে পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে হবে।

কাউন্সিলর পদধারীরা লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত না হওয়ায় তারা পদত্যাগ না করে প্রার্থী হতে বাধা নেই।

তবে প্যানেল মেয়র প্রার্থী হতে চাইলে তাকেও ছাড়তে হবে কাউন্সিলরের পদ।

আচরণবিধি অনুযায়ী, সিটি ভোটের প্রচারে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ সরকারি সুবিধাভোগীরা অংশ নিতে পারবেন না।

নির্বাচন নিরপেক্ষ

হবে: সিইসি

এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা নেবো। তারা ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরবেন, সেই নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব।

রোববার নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা বলেন।

কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘ভোটারদের উদ্দেশে বলছি, আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসেন। নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারদের দায়িত্ব আমরা নেবো। সুতরাং ভোটাররা ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরবেন। সেই নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব। তাই আহ্বান করব-ভোটাররা যেন ভোট দিতে আসেন।’

আগামী ৩০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) এই দুই সিটির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সিইসি বলেন, বর্তমান মেয়ররা নির্বাচন করতে চাইলে তাদের পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আর করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি নির্ধারণ করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা আদালতে গেলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনে ব্যক্তি কখন নির্বাচন হলো কি না হলো, সেটা নিয়ে কিছু বলা নেই আইনে। সিটির মেয়াদের কথা আইনে বলা আছে। তাই আইনি জটিলতা হবে না।

নতুন ভোটার হবে ৩১ জানুয়ারির পর। তাই নতুন ভোটাররাও কোনো আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারবে না।

এই নির্বাচন কি সব দলের জন্য, নাকি একটি দলকে জেতানোর জন্য-এমন প্রশ্নের জবাবে কে এম নুরুল হুদা বলেন, এটা কোনো কথা হলো। নির্বাচন কমিশন কোনো দিন একটি দলের জেতার জন্য কাজ করে? সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। এটা চিন্তা করার অবকাশ নেই।

তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনা থাকবে না। পুলিশ, বিজিবি থাকবে। তবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন পরিচালনার জন্য প্রতি কেন্দ্রে দুইজন করে সেনাসদস্য থাকবে।

দলের সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ পূরণের জন্য ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় ঠিক করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে সিইসি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী এটা আইনসিদ্ধ হয়নি। আমাদের আইন অনুযায়ী, দলগুলোকে ২০২০ সালের মধ্যে সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য পদ পূরণ করতে হবে। দল কীভাবে কী করছে, সেটা তাদের ব্যাপার। কোনো দল যদি শর্তটি পূরণ করতে না পারে, তখন আমরা বিবেচনা করব। এত অগ্রিম কিছু বলা যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও সংবাদ